আশুরা কি ?
আজ ইসলামী ঐতিহ্যের সন হিজরী বর্ষের প্রথম মাস, মুহাররমের ১০ তারিখ। এদিনকে আশুরা বলা হয়। এই দিনটি মিশ্র ইতিহাসের দিন।
আশুরার ঘটনাবলী
একদিকে আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর পূর্বে এই দিনে আল্লাহর নবী মুসা (আ.) জালেম ফিরআউনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন। অবাধ্য ফেরআউনের সকল দম্ভ চূর্ণ করে তাকে সদলবলে নদে নিমজ্জিত করেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা।
অপর দিকে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাতের একান্ন বছর পর ইরাকের কারবালা নামক স্থানে ইয়াজীদের পাঠানো জালেম সৈন্যদের হাতে সপরিবারে নৃশংসভাবে নিহত হন প্রিয় নবীর প্রিয় দৌহিত্র জান্নাতী যুবকদের নেতা হুসাইন (রা.)।
আশুরার তাৎপর্য
আল্লাহর নবী মূসা (আ.)-এর মুক্তির ঘটনাই আশুরার দিনটির তাৎপর্যের মূল কারণ। সে কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দিনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমাদেরকে সিয়াম পালন করতে নির্দেশ করেছেন।
সুতরাং আশুরা মানে মূলত মূসা (আ.)-এর মুক্তি ও বিজয়ের দিন। তবে ইতিহাসের পরিক্রমায় একই দিনে যে বর্বরতম ঘটনা ঘটেছে, তা যে কোনো মুমিনে-হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কারণ। ঠিক যেভাবে আমাদের হৃদয়ে রক্ত ঝরে নানা সময়ে মুসলমান নামধারী মুনাফিকদের দ্বারা ইসলামের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ খলীফাসহ বহু সাহাবী ও সালাফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডেও।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে আশুরার মূল তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ও পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে সত্য ও ন্যয়ের পথে অবিচল থাকার শিক্ষা গ্রহণের তাওফীক দান করুন। মূসা (আ.)-এর ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়— সব কষ্ট ও বাধা এক সময় কেটে যায়, শুধু সময় আর আর ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অপেক্ষা।
আশুরা সিয়াম পালনের দিন। এটাই প্রিয় নবীর আদর্শ। হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনায় আমরা শোকার্ত ও ব্যথিত। কিন্তু সেই শোক পালনের নামে তাজিয়া মিছিল, নিজ শরীরে আঘাতসহ যাবতীয় কুসংস্কার ইসলামেই নিষিদ্ধ। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, ‘যারা শোকে গালে চাপড়ায়, জামার বুক ছিড়েঁ ফেলে ও জাহিলি যুগের মতো চিৎকার করে, তারা আমাদের তরীকাভুক্ত নয়।’ (সহীহ বুখারী: ১২৯৭)
মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন, ভুল-বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করুন। সুন্নাতের আলোয় উদ্ভাসিত করুন, বিদআতের কলুষ থেকে মুক্ত রাখুন।