মায়ের লাশ পড়ে আছে ৫ দিন ধরে, লকডাউনে সন্তানরা বাড়িতে বন্দীঃ এখন লাশের কী হবে!

  কুর্মিটোলায় মায়ের লাশ পড়ে আছে ৫ দিন ধরে। আর লকডাউনে সন্তানরা বাড়িতে বন্দী । তাদের মা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা সন্তানেরা জানে না । এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিসিক এলকা-সংলগ্ন চৌধুরীবাড়ির সন্তানেরা। মায়ের লাশ রেখে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে বাড়িতে অবস্থান করছে। এছাড়া তাদের ছোট ভাই মালয়শিয়ায় প্রবাসী।

পাঁচ দিন আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চৌধুরীবাড়ীর মৃত ছিদ্দিক ভান্ডারী ছেলে মো: নুরে আলম জামানের মা নুরুন্নাহারকে (৬৮)  নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালে পৌছানোর আগেই তার মায়ের মৃত্যু হয়।
মরহুমার বড় ছেলে নুরুজ্জামান জানান, ২৪ ঘন্টার মধ্যে করোনা পজেটিভ বা নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ার কথা। কিন্তু ৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমার মায়ের রিপোর্টও জানায়নি কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং আমার মায়ের লাশও তারা দেয়নি। 

এলাকার ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মাওলাও নিশ্চিত করেছেন যে মৃত নারী জ্বর, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। এরজন্য স্থানীয় লোকজন করোনায় মারা গেছে সন্দেহ করে তাদের বাড়িটি লকডাউন করে রেখেছে।

এ বিষয় স্থানীয় খালেক চৌধুরী জানান, নুরে আলম জামান ৫ দিন আগে ঢাকা মেডিকেলে যান তার মাকে নিয়ে। কিন্তু  সে তার মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেনি। আমরা শুনতে পেরেছি যে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মা মারা গেছেন। এই কারণেই ছেলে মেয়েদের কেউই লাশ আনতে আগ্রহী নন।
মরহুমার বড় ছেলে নুরুজ্জামান (৪৮) জানান, ৭ দিন ধরে জ্বর, ঠাণ্ডা ও শ্বাস কষ্ট ছিল আমার মায়ের। এই অবস্থায় যোগিনিঘাটে আত্মীয়ার বাড়িতে ৩ দিন বেড়ান। পরে আবার বাড়িতে আসেন। বাড়িতে ডা: হুমায়ুনের চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে ১২ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। ১৩ এপ্রিল আলদি ডা: প্রফুল্লুকে দেখিয়ে পুনরায় সদর হাসপাতালে আনা হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠায়। পরে তারা দেখে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, হাসপাতালে যাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডা সব লক্ষণের পাশাপাশি তিন-চারবার পাতলা পায়খানা হয়েছে। পরে চিকিৎসা করার আগে আমার মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার মার লাশ হিমাগারে রেখে দেয়। আমাদের বলা হয়েছে যে করোনা পজেটিভ হলে লাশ দেবে না, আর নেগেটিভ হলে লাশ ফেরত দেবে।
তিনি বলেন, ১৩ এপ্রিল থেকে আজ ১৭ এপ্রিল ৫ দিনেও এই রোগীর কোনো রিপোর্ট তার কাছে আসেনি এবং কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে কোনো ফোন এ পর্যন্ত আসেনি। আমি নিজে নিজেই লকডাউনে আছি।

পরিবারের লোকজন অপেক্ষায় আছে কখন কুর্মিটোলা থেকে কখন ফোন আসবে যে তোমার মায়ের করোনা রিপোর্ট নেগিটিভ। মায়ের লাশ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পড়ে আছে পাঁচ দিন ধরে। কিন্তু এই ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট না আসায় পরিবারটি হতাশ।
Related Posts