অযুর গুরুত্ব :
অযু বা পবিত্রতা হল নামাজের চাবি। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত নবী (সঃ) একটি হাদিস, مفتاح الصلاة الطهور অর্থঃ নামাজের চাবিকাঠি হল পবিত্রতা । সুতরাং চাবি যদি ঠিক থাকে, পারফেক্ট হয়, তাহলে তালা খুলবে। আর যদি চাবি পারফেক্ট না হয় বা ঠিক না থাকে তাহলে তালা খুলবে না। ঐ চাবি দিয়ে আপনি ঘরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
মনে করুণ জান্নাত হল আমাদের ঘর বা গন্তব্য। যেখানে ঢুকতে হলে আমদেরকে সালাতের তালাটুকু খুলে ঢুকতে হবে। অর্থাৎ সালাত পরে ঢুকতে হবে। আর সালাতের চাবি হল পবিত্রতা।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, পবিত্রতা চাবি, তার তালা হল সালাত, যা পড়ে আমরা ঢুকতে যাচ্ছি জান্নাতে। আমার শেষ গন্তব্য জান্নাতে। যেখানে যেতে হলে আমাকে আপনাকে অবশ্যই সালাত ঠিক করতে হবে। আর সালাত ঠিক করতে হলে তার চাবি ঠিক থাকতে হবে।
পবিত্র হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হল অজু। অজু কারার সময় বেশকিছু ত্রুটি বা ভুলভ্রান্তি আমাদের হয়ে থাকে। যে ভুলগুলো হয়তো আপনিও করেন। ঐ ভুলগুলো প্রতিনিয়ত করছি, কিন্তু আমরা জানিনা। নবী (সঃ) বলেছেন, لا تقبل صلاة بغير طهور অর্থঃ নামাজ কবুল করা হবে না পবিত্রতা ছাড়া। আল্লাহর কাছে কোন সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না পবিত্রতা ছাড়া।
অতএব, অযু পূর্ণাঙ্গ হলে সালাত পূর্ণাঙ্গ হবে, সালাত পূর্ণাঙ্গ হলে জান্নাতে যাওয়া সহজ হবে। একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিধায় সব কিছুর আগে; সালাতেরও আগে আমাদের লক্ষ্য করা দারকার আমাদের অজু বা তাহারাতটা ঠিকঠাক হচ্ছে কি না।
অযু সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
অযু ছাড়া
নামাজ হবে কি?
উত্তরঃ নামাজ পড়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন করা। আর পবিত্র হওয়া জন্য আপনাকে অযু, গোসল কিংবা তায়াম্মুম করতে হবে। আপনার উপর গোসল ফরজ না হলে আপনি অযু করেই নামাজ পড়তে হবে। অযু ছাড়া নামাজ হবে না। এখন যদি প্রশ্ন করেন, যদি অযুর পানি না পাই তাহলে অজু ছাড়া নামাজ হবে কি? উত্তরঃ না। অজু ছাড়া নামাজ হবে না। পানি না পেলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়তে হবে।
অজু ছাড়া কুরআন ধরা যাবে কি?
উত্তরঃ সরাসরি অযু ছাড়া কোরআন স্পর্শ করা যাবে না। যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে, অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা লাগবেই, তাহলে পবিত্র কাপড় দ্বারা আবৃত করে অজু ছাড়া কুরআন ধরা যাবে।
অযু ছাড়া কোরআন পড়া যাবে কি?
উত্তরঃ যদি তেলাওয়াত কারীর হেফজ বা মুখস্ত থেকে তেলাওয়াত করতে চায় তাহলে অজু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে। কিন্তু কোরআন খুলে বা স্পর্শ করে ওযু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে না। সুতরাং এক কথায় বলা চলে, কুরআন না খুলে বা না ধরে ওযু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে; মুখস্ত সূরা সমূহ।
ওযু ছাড়া কুরআন শোনা যাবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ওযু ছাড়া কুরআন শোনা যাবে।
অজু ছাড়া জিকির করা যাবে কি না ?
উত্তরঃ অযু ছাড়া জিকির করা যাবে। জিকির আত্মার খুরাক ওযু ছাড়া জিকির করা যায়।
ওযু ছাড়া নামাজ পড়ে ফেললে কি করতে হবে?
উত্তরঃ পূর্ব থেকে গোসল বা তায়াম্মুম এর মাধ্যমে পবিত্র হয়ে থাকলে এবং ওযু ছাড়া নামাজ পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। আর অপবিত্র অবস্থায় থাকলে নতুন করে আবার ওযু করে নামাজ পড়তে হবে। অপবিত্র অবস্থায় নামাজ গ্রহণযোগ্য না।
ওযু ছাড়া মসজিদে প্রবেশ করা যাবে কি না?
উত্তরঃ অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ না করাই উত্তম। যদি গোসল ফরজ না হয়ে থাকে তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে ওযু ছাড়া মসজিদে প্রবেশ করা যাবে।
অযু ছাড়া আযান দেওয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ অযু করেই আযান দেওয়া উত্তম। তবে অযু ছাড়া আযান দেওয়া জায়েজ হলেও তা আযানের মত একটা নেক কাজের সৌন্দর্য নষ্ট করে। তাই অযু ছাড়া আযান দিবেন না।
ওযু ছাড়া দোয়া করা যাবে?
উত্তরঃ যে কোন অবস্থায় দোয়া করা যায়। দোয়া করার জন্য অযু করা জরুরী না। হ্যাঁ, ওযু ছাড়া দোয়া করা যাবে।
ওযু ছাড়া মোনাজাত করা যাবে?
উত্তরঃ আল্লাহ পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। মোনাজাত করার সময় পবিত্র হওয়াটা মোনাজাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাই আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার সময় পবিত্র থাকা উত্তম, তবে ওযু ছাড়া মোনাজাত করা যাবে।
ওযু ছাড়া কবর জিয়ারত করা যাবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ওযু ছাড়া কবর জিয়ারত করা যাবে।
অন্যান্য জীবন ঘনিষ্ঠ প্রশ্ন সমূহঃ